ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​হাইটেক পার্কসহ অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণই কাল

হুমকির মুখে চলনবিলের অস্তিত্ব

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০১-১২-২০২৪ ০৩:৪০:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০১-১২-২০২৪ ০৩:৪০:০৮ অপরাহ্ন
হুমকির মুখে চলনবিলের অস্তিত্ব
দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বিল হলো চলনবিল। উত্তরের কয়েকটি জেলা নিয়ে বিস্তৃত এই বিল। যার বড় একটি অংশ নাটোরের সিংড়ায় অবস্থিত। এ বিলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এর পানি সবসময় চলমান। তাই সুবিস্তৃত এই জলাশয়ের নামকরণ হয় চলনবিল। 
দেশের বৃহত্তম এই বিলটি প্রায় ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১২টি গোত্রের ২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল। অপরদিকে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ টন খাদ্য শস্য এবং অন্তত ২০ হাজার টন মাছের যোগান আসে এ চলনবিল থেকে। কিন্তু সম্প্রতি বছরগুলোতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের খেসারত দিতে হচ্ছে বিলটিকে। কারণ বিলটিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ। ফলে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়ছে চলনবিলের জীববৈচিত্র্য অন্যদিকে জলাবদ্ধতা ও কচুরিপানায় কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সম্র্রতি চলনবিলের শেরকোল এলাকার এই বিলে নির্মাণ হচ্ছে হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (টিএসসি) মতো চারটি বড় প্রতিষ্ঠান। এর পাশাপাশি চলনবিলে একটি মিনি স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না রেখে এমন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এখন এই এলাকার কৃষকদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
ফলে শেরকোল চলনবিলের চকপুর, তেলিগ্রাম, সিধাখালী, বামুনহাট, রাণীনগর, বামনুহাট, বোক্তারপুর, গোয়ালবাটান, বিলভারট ও ভাঙ্গারকান্দিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফসলি জমির বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘ সময়ের জন্য জলাবদ্ধ থাকলে চাষাবাদে সমস্যা সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে জমি থেকে শ্যাওলা ও আগাছা পরিষ্কার করতে বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কৃষকদের।
জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় জুনাইদ আহমেদ পলক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা শহরের বাইরে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সিংড়া উপজেলার চলনবিলে নিয়ে যান। যেখানে প্রকল্পের এলাকায় পলকের আত্মীয়-স্বজনের জমিও অতিমূল্যে অধিগ্রহণ করা হয়। সেইসাথে চলনবিলে প্রকল্পের কাজে বালু ভরাটেও পলকের নেতাকর্মীদের সুযোগ দেয় ঠিকাদারেরা। 
শেরকোল এলাকার কৃষক মুনছুর আলী বলেন, বিগত কয়েক বছর আগেও বিলে শেওলা কচুরিপানা জমতো না। পানি স্রোতে দশমাইলের ব্রিজ দিয়ে এগুলো নদীতে চলে যেতো। কিন্তু আইসিটি ভবন ও ওখানে তৈরি কয়েকটা ব্রিজের নিচ বন্ধ থাকার জন্য এখন পানি সেভাবে বের হতে পারে না। ফলে কচুরিপানাসহ অন্যান্য আবর্জনা আমাদের বিলেই থেকে যায়। জমি থেকে এগুলো পরিষ্কার করতে প্রতিবছর বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হয়। যার কারণে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।
অপরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য চলনবিলের ক্ষতির পাশাপাশি অপচয় হয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক থেকে চলনবিলের মাঝে অবস্থিত ৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা আলাদা ব্রিজ। যেখানে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি ব্রিজ করে বাড়তি খরচ সাশ্রয় করা যেত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, ৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য এখানে আলাদা আলাদা ব্রিজ করা হয়েছে। আবার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাওয়ার ব্রিজের নিচে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেখানে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি ব্রিজ হলেই হয়ে যেত সেখানে অযথা দেশের টাকা অপচয় করে লুটপাটের জন্য বাড়তি ব্রিজ করা হয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের  নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা নাটোর- বগুড়া মহাসড়কের মধ্যে যে ব্রিজ নির্মাণ করেছি সেখানে পানি প্রবাহের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। তবে সড়ক সংলগ্ন হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চলনবিলের পানি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি। আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পানি প্রবাহের জায়গা রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। পানি প্রবাহের ব্যবস্থা যদি না রাখা হয় তাহলে অত্র এলাকায় বন্যাসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক সমস্যা হতে পারে। যা ভবিষ্যতে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কসহ সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাছুদুর রহমান বলেন, চলনবিলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে যেন পানি প্রবাহ এবং জীব বৈচিত্র্যের কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে 
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ